জেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: পারিবারিক কলহ, ভুল বোঝাবুঝি, রাগ-অভিমান, যৌতুক দাবি, নির্যাতন ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে আদালতে এসেছিলেন ৫০ দম্পতি। তাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন ফিরিয়ে দিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশ নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এই ৫০ দম্পতিকে। রায়ের পর তাদের সন্তানদের মুখেও হাসি ফুটেছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুর ১২টা সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন ব্যতিক্রমধর্মী এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালত স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে সদ্ভাব বজায়, যৌতুক দাবি না করা, অত্যাচার নির্যাতন না করাসহ ৫ শর্তে আসামিদের আপসে মুক্তি প্রদান করেন। আদালতের আদেশ মেনে না চললে আবারও মামলা চালু হবে বলে সতর্ক করে দেন।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ৫০টি পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এ রকম আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সন্তানাদি পরিবার-পরিজন নিয়ে আগের মতো সংসার করতে পারবে। বাবা ও মায়ের মধ্যে মামলা মোকদ্দমার কারণে এসব পরিবারের শিশুরা পিতৃস্নেহ স্ত্রী স্বামীর স্নেহ বঞ্চিত হচ্ছেন। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে উভয় পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসবের প্রভাব এসেছে পড়েছে তাদের সন্তানদের ওপর। ফলে শিশু সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বাগানবাড়ি গ্রামের তানজিনা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালিয়ে তার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আজ আপস নিষ্পত্তির মাধ্যমে আবারো সংসারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার চিকারকান্দি গ্রামের আফিয়া বেগম বলেন, স্বামী তাকে যৌতুকের জন্য নিয়মিত মারধর করত। পরে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আজ মামলা আপস হয়েছে তিনি স্বামীর ঘরে ফিরে যাবেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝুমগাঁও গ্রামের ইমাম হোসেন বলেন, স্ত্রী তার বিরোদ্ধে যৌতুকের মামলা করে ছিল। আজ মামলা আপস হয়েছে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি আজ বাড়ি ফিরে যাবেন।
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, এই আদালতের বিচারক আগেও এমন কয়েকটি রায় দিয়েছেন বিচারকের এমন রায়ের ফলে ৫০টি পরিবার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাদের ভাঙা সংসার আবারও জোড়া লেগেছে। এতে পরিবারেরর সদস্যদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি নান্টু রায় বলেন, আদালতের কাজ শুধু সাজা দেওয়া নয় শান্তি দেওয়াও। যুগান্তকারী এ রায়ের ফলে ৫০টি পরিবারের সব ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। দীর্ঘদিন মামলা চালিয়ে পরিবারগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। মামলা শেষ হওয়ায় তারা আবার সংসার জীবনে ফিরে যাবে।